Sunday, 20 January 2019

যানবাহন সংশোধন বিল ২০১৭ - পাশ না হওয়ার কারণ কি?


১০ এপ্রিল ২০১৭ তে যানবাহন  সংশোধন বিল পাশ হয় লোকসভায় I রাস্তায় উন্নত আইন জারি করে রাস্তাকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে সংশোধনের খসড়া সংসদের নিম্ন কক্ষে পেশ করা হয় অগাস্ট ২০১৬ এ  I এই সংশোধন গুলির উদ্দেশ্য ছিল আইনকে কঠোর করে,  জরিমানা বৃদ্ধি করে চালকদের নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য উঁবুদ্ধ করা Iপ্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, অগাস্ট ২০১৬ সালে, ক্যাবিনেট এই সংশোধন  কে অনুমোদিত করে যাতে রাস্তা দুর্ঘটনা এবং তার ফলে মৃত্যুর হার কমানো যায় I  আজকের দিনে যদি  ভারতবর্ষে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বলতে হয়, তাহলে দেখা যায় যে প্রতি মুহূর্তে একটি করে সঙ্গীন দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতি ১ ঘন্টায় ভারতীয় রাস্তায় দুর্ঘটনার ফলে ১৬ জন করে মৃত্যুর স্বীকার হয় I আমরা যদি মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা দেখি তাহলে দেখা যাবে যে এই সংখ্যা ২০১৫ তে ১৩১,৭২৬ থেকে বেড়ে ২০১৬ তে হয়েছিল ১৩৬,০৭১ I ২০১৭ সালে মারাত্মক দুর্ঘটনা সংখ্যা ছিল ১৩৪,৭৯৬ I সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ লক্ষ্ সড়ক দুর্ঘটনা রিপোর্ট করা হয় I বর্তমান আইনে ২২৩ টি ভাগ আছে আর সংশোধন বিল এর প্রস্তাব হলো ৬৮ টি তে পরিবর্তন আনার I
আইনে কিচ্ছু বিশেষ পরিবর্তন যা প্রস্তাব করা হয় :
  • পুরো পদ্ধতিকে কেন্দ্রীকরণ করার জন্য আঁধার কার্ড কে বাধ্যতামূলক করা
  • পলাতক উধাও এবং দুঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন অবস্থায় সরকার মৃতের পরিবারকে Rs.২00000 বা তার বেশী ক্ষতিপূরণ দেবে I বর্তমানে এই পরিমান হলো Rs.২৫০০০
  • মানুষ অনেক সময় এগিয়ে এসে সাহায্য করতে ভয় পান যে কোনো অন্য ঝামেলায় পড়ে যাবেন ভেবে I ২০১৬ র আইনের প্রতিশ্রুতি হলো যে সাহায্যকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে I গুড সামারিটান রা ( Good Samaritans) নিজেদের পরিচয় না ও দিতে পারেন I
  • একটি জাতীয় পরিবহন নীতি তৈরী করা হবে যার অধীনে রাজ্য সরকারদের সাথে আলোচনা করে রাস্তায় পরিবহন সংক্রান্ত একটা কাঠামো তৈরী হবে I এই কাঠামো তে সব রাজ্যের একটা পরামর্শদায়ক ভূমিকা থাকবে I রাস্তা ভালো মানে বেশী নিরাপত্তা I
  • যানবাহন আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বীমায়ে ( গাড়ি বা মোটর সাইকেল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) আইনি দায়ের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই I এই বিল অনুযায়ী মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায়ের সর্বোচ্ছ সীমা হবে Rs.১০ লক্ষ আর মর্মান্তিক আঘাতের জন্য Rs.৫ লক্ষ I
  • যানবাহনের উপযুক্ততা যাচাই করার স্বয়ংক্রিয় প্রথা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা I এর ফলে রাস্তায় অনুপযুক্ত গাড়ি থাকবে না I নিরাপদ যানবাহন মানে নিরাপদ রাস্তা I
  • ইলেক্ট্রনিক পর্যবেক্ষণের ফলে নিয়ম ভঙ্গকারীরা সহজে ধরা পড়বেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে I
সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন করেন আঁধার কে বাধ্যতামূলক করা এবং কেন্দ্রীকরণ করা  নিয়ে যখন আঁধার নিয়ে অনেক সমস্যা ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে I এই বিল, জনসাধারণের পরিবহন ব্যবস্থ্যা ব্যক্তিগত সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবার পথ খুলে দেবে I  এই সংস্থারা  অনুমতি এবং কর সংক্রান্ত সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে I সাধারণ পরিবহন ব্যবস্থা এখন রাজ্যের অধীনে (রাষ্ট্রীয় পরিবহন উদ্যোগ) I এই উদ্যোগ গুলি পরিবহন সেবা যেই হারে প্রদান করে তা ব্যক্তিগত সংস্থা দের হারের থেকে অনেক কম I বেসরকারি সংস্থা যদি এর মধ্যে যুক্ত হয় তাহলে জনসাধারণের অনেক বেশী অসুবিধে হবে এবং বর্তমানে যারা এই সব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ করছেন তাদের চাকরি অসুরক্ষিত হয়ে যাবে I এই সব কারণের জন্য বিরোধীরা এই বিল কে সমর্থন করছেন না I যদিও এই বাধা গুলো আসছে তাও এই  বিল পরিবহন ক্ষেত্রে দুর্নীতি সরিয়ে নিরাপত্তা আনার প্রচেষ্টাই করছে I লাইসেন্স ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণ হলে নকল লাইসেন্স বা একাধিক লাইসেন্সের সমস্যা হবে না I এ ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ,  ই-রেজিস্ট্রেশন এবং জাতীয় ডাটাবেস দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবে I যানবাহন আইন ২০১৭ র মূল উদ্দেশ্য হলো কঠোর আইন এনে, কেন্দ্রীকরণ করে, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা কে ক্ষমতা দিয়ে,  ২০২০ এর মধ্যে দেশ জুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা কে ৫০% কমানো I

যুব সমাজের সহযোগিতা নিয়ে এই আইন ভারতবর্ষের রাস্তা কে নিশ্চই নিরাপদ করে তুলতে পারবে I

No comments:

Post a Comment