একটি দেশ যেখানে প্রতি 8 মিনিটে একটি করে মানুষ মারা যান সড়ক দুর্ঘটনার ফলে , সেখানে অর্থিনীতির ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার I প্রতি বছর ভারত রাস্তা দুর্ঘটনার কারণে জি.ডি.পি.র প্রায় ৩% খরচ করে যেটা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায়ে Rs ৫৫০০০ কোটি ($৮.২ বিলিয়ন) I প্রতি বছর ১৪৭,০০০ জন মানুষ মারা যায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য বা গতিসীমা কে অমান্য করে বা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা র অবলম্বন না করে I ইউ.এন থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া যায় ফ্রিওয়ে , হাইওয়ে ওর রাস্তা নির্মাণ এর জন্য কিন্তু তার বেশির ভাগই ব্যবহার হয় দুর্ঘটনার পরিণাম সামলাতে বা রাস্তা মেরামত করতে I এশিয়া প্যাসিফিক এলাকায় ১৯ টি দেশ নিয়ে একটি গবেষণা অনুযায়ী "সড়ক দুর্ঘটনা জনিত খরচ" তালিকায় ভারতবর্ষ একমাত্র জাপান ($ ৬৩০০০ মিলিয়ন) থেকে পিছিয়ে আছে এবং জি.ডি.পি. ক্ষতি তে একমাত্র ইরান ৬% ( $ ৩০,৬৯৭ মিলিয়ন) থেকে পিছিয়ে আছে I
সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা যদি বিপুল ভাবে কমানো যায় তাহলে এই খরচের পরিমান বিশাল অঙ্কে কমানো সম্ভব হবে I ভারতবর্ষ সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু ৫০% কমাতে চায় ২০২০ সালের মধ্যে I এই উদ্দেশ্যেই যানবাহন সংশোধন বিল ২০১৭ (এম.ভি.এক্ট ২০১৭ )একটি বড়ো এবং কাঙ্খিত পদক্ষেপ I
এম.ভি.এক্ট ২০১৭ র প্রচেষ্টা হলো আইন কঠোরতর করে, বেশী জরিমানা জারি করে এবং লাইসেন্স প্রথা কে কেন্দ্রীকরণ করে , চালকদের রাস্তায় নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করা I
আইনে কিচ্ছু বিশেষ পরিবর্তন যা প্রস্তাব করা হয় :
- পুরো পদ্ধতিকে কেন্দ্রীকরণ করার জন্য আঁধার কার্ড কে বাধ্যতামূলক করা
- পলাতক উধাও এবং দুঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন অবস্থায় সরকার মৃতের পরিবারকে Rs.২00000 বা তার বেশী ক্ষতিপূরণ দেবে I বর্তমানে এই পরিমান হলো Rs.২৫০০০
- মানুষ অনেক সময় এগিয়ে এসে সাহায্য করতে ভয় পান যে কোনো অন্য ঝামেলায় পড়ে যাবেন ভেবে I ২০১৬ র আইনের প্রতিশ্রুতি হলো যে সাহায্যকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে I গুড সামারিটান রা ( Good Samaritans) নিজেদের পরিচয় না ও দিতে পারেন I
- একটি জাতীয় পরিবহন নীতি তৈরী করা হবে যার অধীনে রাজ্য সরকারদের সাথে আলোচনা করে রাস্তায় পরিবহন সংক্রান্ত একটা কাঠামো তৈরী হবে I এই কাঠামো তে সব রাজ্যের একটা পরামর্শদায়ক ভূমিকা থাকবে I রাস্তা ভালো মানে বেশী নিরাপত্তা I
- যানবাহন আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বীমায়ে ( গাড়ি বা মোটর সাইকেল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) আইনি দায়ের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই I এই বিল অনুযায়ী মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায়ের সর্বোচ্ছ সীমা হবে Rs.১০ লক্ষ আর মর্মান্তিক আঘাতের জন্য Rs.৫ লক্ষ I
- যানবাহনের উপযুক্ততা যাচাই করার স্বয়ংক্রিয় প্রথা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা I এর ফলে রাস্তায় অনুপযুক্ত গাড়ি থাকবে না I নিরাপদ যানবাহন মানে নিরাপদ রাস্তা I
- ইলেক্ট্রনিক পর্যবেক্ষণের ফলে নিয়ম ভঙ্গকারীরা সহজে ধরা পড়বেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে I
বিগত এক দশকে রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজে অত্যন্ত ধীর গতি, কখনো কখনো বেসরকারি কোম্পানি বা এমনকি সরকারি ঠিকাদার দের দুর্নীতি - এই সব নানা কারণে দুর্ঘটনা জনিত খরচ বেড়েছে এবং সড়ক নিরাপত্তার কোনো উন্নতি হয় নি I
লাইসেন্স ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণ হলে নকল লাইসেন্স বা একাধিক লাইসেন্সের সমস্যা থাকবে না এবং নিয়ম ভাঙলে তার প্রতিকার ও শাস্তি ব্যবস্থা দ্রুত করা যাবে I এম.ভি.এ.বিল এর উদ্দেশ্য হলো , আগামী কিছু বছরের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কে ৫০% কমানো I এই উদ্দেশ্য সফল হলে দুর্ঘটনা জনিত খরচ কম হয়ে , জি.ডি.পি. বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটার একটা বিশাল ভূমিকা থাকবে I
পরিকাঠামোর উন্নতি , সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণে বেশী খরচ করে দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই , অর্থনীতিও উন্নত হবে I
আসুন আমরা সড়ক নিরাপত্তা এনে এক নিরাপদ উন্নত ভারতবর্ষ গড়ে তুলি I
No comments:
Post a Comment