Sunday 20 January 2019

যানবাহন সংশোধন বিল ২০১৭ - পাশ না হওয়ার কারণ কি?


১০ এপ্রিল ২০১৭ তে যানবাহন  সংশোধন বিল পাশ হয় লোকসভায় I রাস্তায় উন্নত আইন জারি করে রাস্তাকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে সংশোধনের খসড়া সংসদের নিম্ন কক্ষে পেশ করা হয় অগাস্ট ২০১৬ এ  I এই সংশোধন গুলির উদ্দেশ্য ছিল আইনকে কঠোর করে,  জরিমানা বৃদ্ধি করে চালকদের নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালানোর জন্য উঁবুদ্ধ করা Iপ্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, অগাস্ট ২০১৬ সালে, ক্যাবিনেট এই সংশোধন  কে অনুমোদিত করে যাতে রাস্তা দুর্ঘটনা এবং তার ফলে মৃত্যুর হার কমানো যায় I  আজকের দিনে যদি  ভারতবর্ষে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বলতে হয়, তাহলে দেখা যায় যে প্রতি মুহূর্তে একটি করে সঙ্গীন দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতি ১ ঘন্টায় ভারতীয় রাস্তায় দুর্ঘটনার ফলে ১৬ জন করে মৃত্যুর স্বীকার হয় I আমরা যদি মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা দেখি তাহলে দেখা যাবে যে এই সংখ্যা ২০১৫ তে ১৩১,৭২৬ থেকে বেড়ে ২০১৬ তে হয়েছিল ১৩৬,০৭১ I ২০১৭ সালে মারাত্মক দুর্ঘটনা সংখ্যা ছিল ১৩৪,৭৯৬ I সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ লক্ষ্ সড়ক দুর্ঘটনা রিপোর্ট করা হয় I বর্তমান আইনে ২২৩ টি ভাগ আছে আর সংশোধন বিল এর প্রস্তাব হলো ৬৮ টি তে পরিবর্তন আনার I
আইনে কিচ্ছু বিশেষ পরিবর্তন যা প্রস্তাব করা হয় :
  • পুরো পদ্ধতিকে কেন্দ্রীকরণ করার জন্য আঁধার কার্ড কে বাধ্যতামূলক করা
  • পলাতক উধাও এবং দুঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন অবস্থায় সরকার মৃতের পরিবারকে Rs.২00000 বা তার বেশী ক্ষতিপূরণ দেবে I বর্তমানে এই পরিমান হলো Rs.২৫০০০
  • মানুষ অনেক সময় এগিয়ে এসে সাহায্য করতে ভয় পান যে কোনো অন্য ঝামেলায় পড়ে যাবেন ভেবে I ২০১৬ র আইনের প্রতিশ্রুতি হলো যে সাহায্যকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে I গুড সামারিটান রা ( Good Samaritans) নিজেদের পরিচয় না ও দিতে পারেন I
  • একটি জাতীয় পরিবহন নীতি তৈরী করা হবে যার অধীনে রাজ্য সরকারদের সাথে আলোচনা করে রাস্তায় পরিবহন সংক্রান্ত একটা কাঠামো তৈরী হবে I এই কাঠামো তে সব রাজ্যের একটা পরামর্শদায়ক ভূমিকা থাকবে I রাস্তা ভালো মানে বেশী নিরাপত্তা I
  • যানবাহন আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বীমায়ে ( গাড়ি বা মোটর সাইকেল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) আইনি দায়ের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই I এই বিল অনুযায়ী মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায়ের সর্বোচ্ছ সীমা হবে Rs.১০ লক্ষ আর মর্মান্তিক আঘাতের জন্য Rs.৫ লক্ষ I
  • যানবাহনের উপযুক্ততা যাচাই করার স্বয়ংক্রিয় প্রথা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা I এর ফলে রাস্তায় অনুপযুক্ত গাড়ি থাকবে না I নিরাপদ যানবাহন মানে নিরাপদ রাস্তা I
  • ইলেক্ট্রনিক পর্যবেক্ষণের ফলে নিয়ম ভঙ্গকারীরা সহজে ধরা পড়বেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে I
সংসদে বিরোধীরা প্রশ্ন করেন আঁধার কে বাধ্যতামূলক করা এবং কেন্দ্রীকরণ করা  নিয়ে যখন আঁধার নিয়ে অনেক সমস্যা ইতিমধ্যেই দেখা দিয়েছে I এই বিল, জনসাধারণের পরিবহন ব্যবস্থ্যা ব্যক্তিগত সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবার পথ খুলে দেবে I  এই সংস্থারা  অনুমতি এবং কর সংক্রান্ত সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে I সাধারণ পরিবহন ব্যবস্থা এখন রাজ্যের অধীনে (রাষ্ট্রীয় পরিবহন উদ্যোগ) I এই উদ্যোগ গুলি পরিবহন সেবা যেই হারে প্রদান করে তা ব্যক্তিগত সংস্থা দের হারের থেকে অনেক কম I বেসরকারি সংস্থা যদি এর মধ্যে যুক্ত হয় তাহলে জনসাধারণের অনেক বেশী অসুবিধে হবে এবং বর্তমানে যারা এই সব রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে কাজ করছেন তাদের চাকরি অসুরক্ষিত হয়ে যাবে I এই সব কারণের জন্য বিরোধীরা এই বিল কে সমর্থন করছেন না I যদিও এই বাধা গুলো আসছে তাও এই  বিল পরিবহন ক্ষেত্রে দুর্নীতি সরিয়ে নিরাপত্তা আনার প্রচেষ্টাই করছে I লাইসেন্স ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণ হলে নকল লাইসেন্স বা একাধিক লাইসেন্সের সমস্যা হবে না I এ ছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষণ,  ই-রেজিস্ট্রেশন এবং জাতীয় ডাটাবেস দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করবে I যানবাহন আইন ২০১৭ র মূল উদ্দেশ্য হলো কঠোর আইন এনে, কেন্দ্রীকরণ করে, সরকার এবং বেসরকারি সংস্থা কে ক্ষমতা দিয়ে,  ২০২০ এর মধ্যে দেশ জুড়ে সড়ক দুর্ঘটনা কে ৫০% কমানো I

যুব সমাজের সহযোগিতা নিয়ে এই আইন ভারতবর্ষের রাস্তা কে নিশ্চই নিরাপদ করে তুলতে পারবে I

Saturday 19 January 2019

যানবাহন সংশোধন আইন ২০১৭ কি ভাবে ভারতবর্ষের অর্থনীতি কে সাহায্য করবে


একটি দেশ যেখানে প্রতি 8 মিনিটে একটি করে মানুষ মারা যান সড়ক দুর্ঘটনার ফলে , সেখানে অর্থিনীতির ক্ষতি হয় লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার I প্রতি বছর ভারত রাস্তা দুর্ঘটনার কারণে জি.ডি.পি.র প্রায় ৩% খরচ করে যেটা টাকার অঙ্কে দাঁড়ায়ে Rs ৫৫০০০ কোটি ($৮.২ বিলিয়ন) I প্রতি বছর ১৪৭,০০০ জন মানুষ মারা যায় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য বা গতিসীমা কে অমান্য করে বা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা র অবলম্বন না করে I  ইউ.এন থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাওয়া যায় ফ্রিওয়ে , হাইওয়ে ওর রাস্তা নির্মাণ এর জন্য কিন্তু তার বেশির ভাগই ব্যবহার হয় দুর্ঘটনার পরিণাম সামলাতে বা রাস্তা মেরামত করতে I এশিয়া প্যাসিফিক এলাকায় ১৯ টি দেশ নিয়ে একটি গবেষণা অনুযায়ী "সড়ক দুর্ঘটনা জনিত খরচ" তালিকায় ভারতবর্ষ একমাত্র জাপান ($ ৬৩০০০ মিলিয়ন) থেকে পিছিয়ে আছে এবং জি.ডি.পি. ক্ষতি তে একমাত্র ইরান ৬% ( $ ৩০,৬৯৭ মিলিয়ন) থেকে পিছিয়ে আছে I
সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা যদি বিপুল ভাবে কমানো যায় তাহলে এই খরচের পরিমান বিশাল অঙ্কে কমানো সম্ভব হবে I ভারতবর্ষ সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু ৫০% কমাতে চায় ২০২০ সালের মধ্যে I এই উদ্দেশ্যেই  যানবাহন সংশোধন বিল ২০১৭ (এম.ভি.এক্ট ২০১৭ )একটি বড়ো এবং কাঙ্খিত পদক্ষেপ I
এম.ভি.এক্ট ২০১৭ র প্রচেষ্টা হলো আইন কঠোরতর করে, বেশী জরিমানা জারি করে এবং লাইসেন্স প্রথা কে কেন্দ্রীকরণ করে , চালকদের রাস্তায় নিরাপদ ভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করা I
আইনে কিচ্ছু বিশেষ পরিবর্তন যা প্রস্তাব করা হয় :
  • পুরো পদ্ধতিকে কেন্দ্রীকরণ করার জন্য আঁধার কার্ড কে বাধ্যতামূলক করা
  • পলাতক উধাও এবং দুঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন অবস্থায় সরকার মৃতের পরিবারকে Rs.২00000 বা তার বেশী ক্ষতিপূরণ দেবে I বর্তমানে এই পরিমান হলো Rs.২৫০০০
  • মানুষ অনেক সময় এগিয়ে এসে সাহায্য করতে ভয় পান যে কোনো অন্য ঝামেলায় পড়ে যাবেন ভেবে I ২০১৬ র আইনের প্রতিশ্রুতি হলো যে সাহায্যকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে I গুড সামারিটান রা ( Good Samaritans) নিজেদের পরিচয় না ও দিতে পারেন I
  • একটি জাতীয় পরিবহন নীতি তৈরী করা হবে যার অধীনে রাজ্য সরকারদের সাথে আলোচনা করে রাস্তায় পরিবহন সংক্রান্ত একটা কাঠামো তৈরী হবে I এই কাঠামো তে সব রাজ্যের একটা পরামর্শদায়ক ভূমিকা থাকবে I রাস্তা ভালো মানে বেশী নিরাপত্তা I
  • যানবাহন আইন ১৯৮৮ অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বীমায়ে ( গাড়ি বা মোটর সাইকেল এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) আইনি দায়ের কোনো সর্বোচ্চ সীমা নেই I এই বিল অনুযায়ী মৃত্যুর ক্ষেত্রে দায়ের সর্বোচ্ছ সীমা হবে Rs.১০ লক্ষ আর মর্মান্তিক আঘাতের জন্য Rs.৫ লক্ষ I
  • যানবাহনের উপযুক্ততা যাচাই করার স্বয়ংক্রিয় প্রথা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা I এর ফলে রাস্তায় অনুপযুক্ত গাড়ি থাকবে না I নিরাপদ যানবাহন মানে নিরাপদ রাস্তা I
  • ইলেক্ট্রনিক পর্যবেক্ষণের ফলে নিয়ম ভঙ্গকারীরা সহজে ধরা পড়বেন এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে I
বিগত এক দশকে রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের কাজে অত্যন্ত ধীর গতি, কখনো কখনো বেসরকারি কোম্পানি বা এমনকি সরকারি ঠিকাদার দের দুর্নীতি - এই সব নানা কারণে দুর্ঘটনা জনিত খরচ বেড়েছে এবং সড়ক নিরাপত্তার কোনো উন্নতি হয় নি I
লাইসেন্স ব্যবস্থা কেন্দ্রীকরণ হলে নকল লাইসেন্স বা একাধিক লাইসেন্সের সমস্যা থাকবে না এবং নিয়ম ভাঙলে তার প্রতিকার ও শাস্তি ব্যবস্থা দ্রুত করা যাবে I এম.ভি.এ.বিল এর উদ্দেশ্য হলো ,  আগামী কিছু বছরের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা কে ৫০% কমানো I এই উদ্দেশ্য সফল হলে দুর্ঘটনা জনিত খরচ কম হয়ে , জি.ডি.পি. বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটার একটা বিশাল ভূমিকা থাকবে I
পরিকাঠামোর উন্নতি , সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণে বেশী খরচ করে দেশের পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি তো হবেই , অর্থনীতিও উন্নত হবে I  
আসুন আমরা সড়ক নিরাপত্তা এনে এক নিরাপদ উন্নত ভারতবর্ষ গড়ে তুলি I  

Thursday 17 January 2019

যানবাহন সংশোধন আইন ২০১৭ - প্রয়োজনীয় তথ্য


ভারতীয় সংসদ দ্বারা  জারি করা যানবাহন আইন ১৯৮৮ ,  রাস্তায় ব্যৱহৃত সব রকম যানবাহনের চলাচল সংক্রান্ত নিয়ম কানুন পরিচালনা করে I কিন্তু এই আইনের নিজস্ব কিছু ঘাটতি আছে যার বর্তমান সময় ব্যবস্থা  অনুযায়ী পরিবর্তন করা প্রয়োজন I বর্তমান পদ্ধতি অনুযায়ী , এই আইন রাস্তায় চলমান যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন থেকে চালকের লাইসেন্স অবধি সব আইনগত দিক নিয়ন্ত্রণ করে I কিন্তু কিছু কিছু  ক্ষেত্রে, বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী আধুনিকতা  আনার প্রয়োজন আছে I
https://lh6.googleusercontent.com/jUX7Q3HgJKVBB5XzXvhGj5uPIrZuLy0_Ha8rNfo2zCvideik3MMy3DOvpTpq54ZyPncSXtvNdal4E2ZKvaNCysUkSwctnMD-sKTZzVCu1mNXWHSjLc02lSdDe1fy1TbtkZJnt15W

প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে, অগাস্ট ২০১৬ সালে, ক্যাবিনেট "যানবাহন সংশোধন বিল" কে অনুমোদিত করে I  এই বিল এর মূল উদ্দেশ্য হলো রাস্তা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমানো I আজকের দিনে যদি  ভারতবর্ষে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে বলতে হয়, তাহলে দেখা যায় যে প্রতি মুহূর্তে একটি করে সঙ্গীন দুর্ঘটনা ঘটে এবং প্রতি ঘন্টায় ভারতীয় রাস্তায় দুর্ঘটনার ফলে ১৬ জন করে মৃত্যুর স্বীকার হয় I রাস্তা দুর্ঘটনায় রোজ মারা যায় ২০ জন শিশু  যাদের বয়েস ১৪ বছরের কম I সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু ২০১৫ থেকে ২০১৬র মধ্যে ৩% হারে  বেড়েছে I আমরা যদি মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা দেখি তাহলে দেখা যাবে যে এই সংখ্যা ২০১৫ তে ১৩১,৭২৬ থেকে বেড়ে ২০১৬ তে হয়েছিল ১৩৬,০৭১ I ২০১৭ সালে মারাত্মক দুর্ঘটনা সংখ্যা ছিল ১৩৪,৭৯৬ I সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ লক্ষ্ সড়ক দুর্ঘটনা রিপোর্ট করা হয় I
বর্তমান আইনে ২২৩ টি ভাগ আছে আর সংশোধন বিল এর প্রস্তাব হলো ৬৮ টি তে পরিবর্তন আনার I প্রস্তাবিত সংশোধন অনুযায়ী তৃতীয় পক্ষ বীমার ক্ষেত্রে দাবী আর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পদ্ধতিকে সহজ করা হবে I নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী এমন সব অবস্থা, যেখানে দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যু হয়েছে কিন্তু চালক পলাতক, সেই সব ক্ষেত্রে জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ  দুটোই বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে I বিল এ ২৮ টি নতুন ভাগ যুক্ত করার প্রস্তাব আছে যার মূল উদ্দেশ্যই হলো রাস্তায় নিরাপত্তা বাড়ানো এবং নাগরিকদের চলাফেরা সহজ করা I প্রস্তাব গুলোর আরও কিছু লক্ষ্য হলো দেশ জুড়ে রাস্তার গুণমান এবং পরিকাঠামো উন্নত করা, সংযোগ বাড়ানো , গ্রামের পরিবহন ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয়তা ( অটোমেশন) আনা, কম্পিউটারের প্রয়োগ বাড়ানো এবং "অনলাইন" পরিষেবা দেওয়া I
বিল এর প্রধান বৈশিষ্ট্য :
  • ট্রাফিক আইন অমান্য করার জরিমানা বৃদ্ধি পাবে
  • দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির নগদবিহীন চিকিৎসা
  • মৃতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ বৃদ্ধি করা
  • গুড সামারিটান ( Good Samaritan) নির্দেশিকা যোগ করা
  • জাতীয় পরিবহন নীতি
  • বাধ্যতামূলক বীমা
  • অপ্রাপ্তবয়স্কদের অপরাধ বিচার হওয়া
  • যানবাহনের উপযুক্ততা যাচাই করার স্বয়ংক্রিয় প্রথা ব্যবহার হওয়া
  • রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স এর জাতীয় নথিপত্র
  • ইলেকট্রনিক পর্যবেক্ষণ
নতুন যানবাহন সংশোধন বিলের অনুমোদনের পথে নানা বাধা আছে I এই বিল, জনসাধারণের পরিবহন ব্যবস্থ্যা ব্যক্তিগত সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবার পথ খুলে দেবে I  এই সংস্থারা  অনুমতি এবং কর সংক্রান্ত সব বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে I এই বিল কেন্দ্রীয় সরকার কেও অনেক বেশি ক্ষমতা এনে  দেবে I এই বিল রাজ্য সভায় আলোচিত হয় কিন্তু অনেক বিরোধী দল প্রতিবাদ জানায় - তাই বিল এখনো সংসদে পাশ হয় নি I বিল এর  প্রস্তাব অনুযায়ী ভাগ ৬৬এ যোগ করা হবে যার দরুন সব রাজ্যের সাথে আলোচনা করে একটি  জাতীয় পরিবহন নীতি তৈরী করা হবে যাতে একটি পরামর্শদায়ক প্রক্রিয়া কাজ করবে I
দেশের জি.ডি.পি বাড়ার সাথে সাথে যানবাহন কেনার ক্ষমতা বেড়েছে আর তাই হঠাৎ বেড়ে গেছে রাস্তায় যানবাহনের সংখ্যা I এর ফলে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে দুর্ঘটনাও I আগামী প্রজন্ম কে যুঝতে হবে রাস্তায় অনেক বেশি ট্রাফিকের সাথে ও অনেক সময় রাস্তায় মৃত্যুপ্রায় অবস্থার সাথে I তাই এই সংশোধন বিল আমাদের রাস্তা নিরাপত্তা বৃদ্ধির পথে খুব উপকারী  হবে I
প্রতি বছর ভারত রাস্তা দুর্ঘটনার কারণে জি.ডি.পি.র ৩% খরচ করে - এই পরিমাণ টি বেশ বড়ো I রাস্তার নিরাপত্তা বাড়লে অবস্থার উন্নতি নিশ্চই হবে I
প্রস্তাবিত কঠোর আইন, অমান্যতার জন্য বেশি জরিমানা , দুর্ঘটনায় বেশি ক্ষতিপূরণ  - এই সব পরিবর্তন নিশ্চই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার কমাবে এবং সড়ক নিরাপত্তার উদ্দেশ্য সাধন হবে I
বিল এ  প্রস্তাবিত জরিমানা বৃদ্ধি সংক্রান্ত কিছু বিশেষ অংশ :
  • পলাতক উধাও এবং দুঘটনায় মৃত্যু হয়েছে এমন অবস্থায় সরকার মৃতের পরিবারকে Rs.২00000 বা তার বেশী ক্ষতিপূরণ দেবে I বর্তমানে এই পরিমান হলো Rs.২৫০০০
  • মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ন্যূনতম জরিমানা Rs.২০০০ থেকে Rs.১০০০০ করা হয়েছে
  • দায়িত্বজ্ঞানহীন তীব্র গতিতে গাড়ি চালানোর জরিমানা  Rs.১০০০ থেকে Rs.৫০০০ করা হয়েছে
  • লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর ন্যূনতম জরিমানা হবে বর্তমান Rs.৫০০ র জায়গায় Rs.৫০০০
  • গতিসীমার উর্ধে  গাড়ি চালানোর জরিমানা  Rs.৪০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.১০০০-২০০০
  • সিট বেল্ট না পড়ার জরিমানা বর্তমান Rs.১০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.১০০০
  • গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার জরিমানা বর্তমান Rs.১০০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.৫০০০
আইন কঠোর করা , রাস্তা পরিকাঠামোর উন্নতির জন্য খরচ করা ভারতীয় সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত পরিসংখ্যান কে নিশ্চই উন্নত করবে I

Wednesday 16 January 2019

যানবাহন আইন (Motor Vehicle Act – “এম.ভি.এ” ) পুরোনো বনাম নতুন


আমাদের দেশে , পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে যানবাহন, ব্রিটিশরা আসার অনেক আগে থেকে প্রচলিত I দেশ  ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়ার পর,  রাস্তা ও যানবাহন চলাচল কে নিয়মাবদ্ধ করার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয় I এর জন্য  প্রয়োজন হয় রাস্তা ঘাটে প্রযোজ্য একটা আচরণ বিধি এবং সেই সংশ্লিষ্ট নানা রকম নিয়ম, আইন-কানুন ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থ্যা I  এই উদ্দেশ্য পূরণ করতে ১৯১৪ সালে তৈরী হয় প্রথম ভারতীয় যানবাহন আইন I এই আইনের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাস্তায় যানবাহন চলাচলের উপর একটা সহজ এবং সঠিক প্রশাসন বজায় রাখা I
"ভারতীয় যানবাহন আইন , ১৯১৪ " ছিল একটি কেন্দ্রীয় আইন যেটি সমগ্র ব্রিটিশ ভারতে প্রযোজ্য ছিল I এই আইনের ১৮ টি ভাগ ছিল এবং স্থানীয় সরকার দের দায়িত্ব ছিল যানবাহন ও চালক দের নথিভুক্ত ( রেজিস্ট্রি) করা ও আইন ব্যবস্থ্যা সঠিক ভাবে পরিচালনা করা I পরে এই আইন বদলে হয় "যানবাহন আইন ১৯৩৯" যেটি কার্যকর হয় ১৯৪০ এ I
এরপর প্রযুক্তির প্রয়োগ বৃদ্ধি ও দেশের সামগ্রিক উন্নতির ফলে প্রয়োজন হয় নিয়মাবলীতে পরিবর্তন আনা  এবং তারই ফলস্বরূপ লাঘব হয় সর্বশেষ যানবাহন আইন ১৯৮৮ সালে I
২০১৭ সালে এই আইনে আরও কিছু পরিবর্তনের প্রস্তাব লোকসভায় পাশ হয়ে গেলেও আটকে যায় রাজ্য সভায় I
"কনসিউমার ভয়েস" নামক একটি নীতিনির্ধারণ ও অভিযোগ সমাধানকারী সংস্থার গবেষণা অনুযায়ী ৯৬% মনে করেন যে এই বিল টি পাশ হলে ইউ.এন আদেশপত্র অনুযায়ী ২০২০ র মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা ৫০% অবধি কম করা সম্ভব হবে I
ভারতবর্ষে সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা এই মুহূর্তে বার্ষিক ১.৬ লক্ষ -  পৃথিবীর তালিকার উচ্চস্থানে অন্যতম I এই সংখ্যা কে কমানোর জন্য ৯৭% মনে করেন যে এই বিল টি রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে সবার সমর্থন করা উচিত I
এই বিলটি তে কিছু নতুন ভাগ আছে আর কিছু বর্তমান ভাগে পরিবর্তন আছে I
পুরোনো এবং নতুন যানবাহন আইনের পার্থক্য:
১.নতুন আইন অনুযায়ী চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন করানোর জন্য আঁধার কার্ড বাধ্যতামূলক প্রয়োজন হবে I
২.যে সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পর চালক উধাও হয়ে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির মৃত্যু হয়, এখন সেই সব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ হলো মাত্র ২৫০০০ টাকা I নতুন আইনে মৃতের পরিবারের জন্য , এই ক্ষতিপূরণের মাত্রা বাড়িয়ে Rs.২ লক্ষ  বা তার বেশী সুপারিশ করা হয়েছে I
৩. দুর্ঘটনার কারণ যখন অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক ,  তখন দায়ী হবে হয় চালকের বাবা-মা অথবা গাড়ির মালিক যদি না তারা প্রমাণ করতে পারেন যে তারা এই অপরাধ সম্মন্ধে কিছু জানতেন না বা তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছিলেন I  যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে এবং ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকের উপর শিশু বিচার আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে I
৪.দুর্ঘটনার সময় রাস্তায় উপস্থিত যে ব্যক্তি/ব্যক্তিরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসবেন ( Good Samaritans ) তাদের কোনোরকম আইনী দায়বদ্ধতা থাকবে না I তারা চাইলে নিজেদের পরিচয় পুলিশ বা ডাক্তার/হাসপাতালে নাও জানাতে পারেন I
৫. মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর ন্যূনতম জরিমানা Rs.২০০০ থেকে Rs.১০০০০ করা হয়েছে I
৬.দায়িত্বজ্ঞানহীন তীব্র গতিতে গাড়ি চালানোর জড়িমানা Rs.১০০০ থেকে Rs.৫০০০ করা হয়েছে I
৭.লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর ন্যূনতম জড়িমানা হবে বর্তমান Rs.৫০০র জায়গায় Rs.৫০০০ টাকা I
৮.গতিসীমার উর্ধে  গাড়ি চালানোর জড়িমানা Rs.৪০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.১০০০-২০০০ I
৯.সিট বেল্ট না পড়ার জড়িমানা বর্তমান Rs.১০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.১০০০ I
১০. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলার জড়িমানা বর্তমান Rs.১০০০ থেকে বেড়ে হবে Rs.৫০০০ I
১১.  একটি যানবাহন দুর্ঘটনা তহবিল তৈরী করা হবে যার থেকে ভারতবর্ষের সব রাস্তার ব্যবকারীরা কিছু রকমের দুর্ঘটনার জন্য বাধ্যতামূলক বীমা পাবেন I
১২. সব যানবাহনকে এমন ভাবে পরিবর্তন করতে হবে যাতে যাদের বিশেষ প্রয়োজন আছে তারাও সহজেই ব্যবহার করতে পারেন I
১৩. যে সব দুর্ঘটনা রাস্তার নকশা/নির্মাণের ত্রুটি বা অপর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের কারণে হবে, তার জন্য দায়ী হবেন ঠিকাদার, পরামর্শদাতা এবং নাগরিক সংস্থা I
১৪. দুর্ঘটনার  ৬ মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবী জানাতে হবে ক্লেইমস ট্রাইবুনালে (Claims Tribunal )I
১৫. তৃতীয় পক্ষ বীমার সর্বোচ্চ সীমা সরিয়ে দেওয়া হবে I ২০১৬ র বিলে এই সীমা ছিল মৃত্যুর ক্ষেত্রে Rs.১০ লক্ষ আর মর্মান্তিক আঘাতের জন্য Rs.৫ লক্ষ I
১৬. দেখা যায় যে একবার চালানোর লাইসেন্স পেয়ে গেলে রিনিউ করার কথা অনেকে ভুলে যান i আর এর জন্য ১ মাস সময় খুব কম বলে এই সময় সীমাকে বাড়িয়ে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছর আগে থেকে ১ বছর পর অবধি করা হবে I
১৭. গাড়ির ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ সঠিক গুণমানের না হলে নানা রকমের দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে I  আর থাকে পরিবেশ ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা I  এই আইন অনুযায়ী সরকার সেরকম সব যানবাহন কে প্রত্যাহার করতে পারে যেগুলোতে সঠিক মানের ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয় নি এবং এই সব গাড়ির উদ্পাদক কোম্পানি দের উপর ৫০০ কোটি টাকা অবধি জড়িমানা হতে পারে I
এম.ভি.এ. ১৯৮৮ ও এম.ভি.সংশোধন ২০১৭ র পার্থক্য ছোট করে :
বিষয়
এম.ভি.এ. ১৯৮৮
এম.ভি.এ. ২০১৭
যানবাহন রেজিস্ট্রেশন ও চালকের লাইসেন্সের জন্য আঁধার কার্ড বাধ্যতামূলক
না
হ্যা
মৃত্যু ও চালক পলাতক ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ
Rs.২৫০০০
Rs. ২০০০০০
মদ খেয়ে চালানোর ন্যূনতম জড়িমানা
Rs.২০০০
Rs. ১০০০০
দায়িত্বজ্ঞানহীন তীব্র গতিতে গাড়ি চালানোর জড়িমানা
Rs.১০০০
Rs. ৫০০০
লাইসেন্স ছাড়া চালানোর ন্যূনতম জড়িমানা
Rs.৫০০
Rs. ৫০০০
গতিসীমার উর্ধে চালানোর ন্যূনতম জড়িমানা
Rs.৪০০
Rs. ১০০০
যাদের বিশেষ প্রয়োজন আছে তাদের জন্য গাড়ি তে পরিবর্তন আনা
না
হ্যা
ড্রাইভিং লাইসেন্স রিনিউ করার সময়সীমা
১ মাস
১ বছর
প্রয়োজনীয় মানের নীচে ইঞ্জিন বা যন্ত্রাংশ ব্যবহারের জন্য উদ্পাদকের উপর ন্যূনতম জড়িমানা
সংজ্ঞায়িত না
Rs. ৫০০ কোটি

যেমন সহজেই দেখা যাচ্ছে যে বর্তমান আইন এবং পরিবর্তন গুলির মধ্যে প্রচুর পার্থক্য I লোকসভায় প্রস্তাবিত পরিবর্র্তন গুলো পাশ হয়ে গেছে কিন্তু রাজ্যসভায় পাশ হয় নি I আশা করা যায় যে এই বিল পাশ হলে যে সব পরিবর্তন আসবে তাতে রাস্তায় দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা নিশ্চই কমবে I